প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। তাদের কারও হাতে রামদা বা কিরিচ, কারও হাতে রড-লাঠি। লাঠি-রড দিয়ে একনাগাড়ে আঘাত করা হচ্ছিল ছেলেটিকে। বাঁচার জন্যে কাকুতি-মিনতি করা ছাড়া, তার আর কিছু করার ছিল না। পালানোর পথ খুঁজছিলেন। একটু সুযোগ পেলে দৌড় দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। যুবকরা যেন প্রশিক্ষিত, নির্দয়-নির্মম। তাকে পালানোর কোনো সুযোগ না দিয়ে আঘাত করেই যাচ্ছিল। হরিণ যেমন চিতাবাঘের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্যে দৌড় দেয়। যুবকটিও ঠিক সেভাবে দৌড় দেয়, প্রাণ বাঁচানোর জন্যে। রডের আঘাতে ফুটপাতে পড়ে যায়। পড়ে যাওয়ার পরেও আঘাত চলতে থাকে। পুলিশ একটু দুরে দাঁড়িয়ে তা দেখছিল।
এখন যুবকটি একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পিঠ-হাত-পা-ঘাড় রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত। কোথাও কোথাও ফ্র্যাকচার হয়েছে। ছেলেটি মাস্তান বা সন্ত্রাসী নয়।
ছেলেটির নাম এমএ আহাদ। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) ফটো সাংবাদিক। গত ৫ আগস্ট ধানমন্ডি-জিগাতলা এলাকা যে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল, সেখানে দায়িত্ব পালন করছিলেন সংবাদকর্মীরা। আহাদসহ সেদিন কমপক্ষে ১২ জন সংবাদকর্মীকে পিটিয়ে আহত, ক্ষত-বিক্ষত করা হয়েছে। সবাইকে প্রায় একইভাবে আঘাত করা হয়েছে।
গত ৪ আগস্ট দ্য ডেইলি স্টারের পাঁচ জনসহ কমপক্ষে ১০ জন সাংবাদিক মারধরের শিকার হয়েছেন। একজন নারী সংবাদকর্মী নিপীড়িত হয়েছেন। গত এক সপ্তাহের শিশু-কিশোরদের প্রতিবাদের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে কমপক্ষে ২৫ জন সংবাদকর্মী মারধরের শিকার হয়েছেন। এর বাইরে ছোট-খাটোভাবে আহত বা ধাওয়া বা বিষোদ্গারের শিকার হয়েছেন অনেক সংবাদকর্মী।
প্রশ্ন হলো, এভাবে টার্গেট করে কেন সংবাদকর্মীদের আক্রমণ করা হচ্ছে? কেন সংবাদকর্মীদের ক্ষত-বিক্ষত, রক্তাক্ত করা হলো?
আন্দোলন যারা করেছেন, যারা সমর্থন করেছেন, যারা সমর্থন করেননি, সংবাদকর্মীরা কারোরই প্রতিপক্ষ নন। যা ঘটনা ঘটছিল, সংবাদকর্মীরা তা সংগ্রহ করছিলেন-ছবি তুলছিলেন। পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন।
তাদেরকে মারা হলো কেন? কারা মারল সাংবাদিকদের? কোনো কোনো গণমাধ্যম লিখেছে, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন সংবাদকর্মীরা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী, সাংবাদিকদের ওপর হামলায় ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলে লিস্ট দিতে বলেছেন। তাহলে তিনি বিচার করবেন।
যারা হামলা করেছে তাদের স্পষ্ট ছবি আছে, ভিডিও চিত্র আছে। তাদের অনেকের মুখ পরিষ্কার দেখা যায়। যারা হেলমেট পরে আছে, চেনা যায় তাদেরও অনেককে। এরা ছাত্রলীগ কী ছাত্রলীগ না, সেই বিতর্কেরও তো প্রয়োজন নেই। এরা অস্ত্রধারী, আক্রমণকারী- সন্ত্রাসী। ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যে এই পরিচিতিই তো যথেষ্ট হওয়ার কথা।
এদের তালিকা কেন সংবাদকর্মীদের করে দিতে হবে? কী অদ্ভুত কথা! এ কাজ সংবাদকর্মীদের করার কথা না আপনাদের, মানে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর করার কথা? প্রায় প্রতিটি মারধরের ঘটনার সময় পুলিশের অবস্থান ছিল কাছাকাছি। কোনো পুলিশ একজন সংবাদকর্মীকেও বাঁচাতে বা রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি। কেন আসেনি? এটা কি পুলিশের দায়িত্ব ছিল না? অস্ত্রধারীরা সংবাদকর্মীদের মারধর করবে, আর একটু দূরে দাঁড়িয়ে পুলিশ তা দেখবে, নিশ্চয়ই পুলিশের দায়িত্বটা এমন নয়? শুধু কি তাই, একাধিক ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণে পুলিশও অংশ নিয়েছে। মারধর করে থানায় নিয়ে আটকে রেখেছে।
গত কয়েক দিনের ঘটনায় লক্ষ্য করা গেছে, দ্য ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলোর সংবাদকর্মীদের খুঁজে খুঁজে মারধর করা হয়েছে। কেন? ডেইলি স্টার বা প্রথম আলো কি একটিও ফেক ছবি প্রকাশ করেছে, সংবাদ ছেপেছে? দায়িত্ব নিয়েই বলতে পারি, তা করা হয়নি। তাহলে মারধরের শিকার হতে হবে কেন? কেন পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে হাসপাতালে শুয়ে থাকতে হবে? সংবাদকর্মীদের পরিবারকে চব্বিশ ঘণ্টা উৎকণ্ঠায় কাটাতে হবে কেন?
আহাদসহ যারা আক্রান্ত হয়েছেন, সবাই প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছেন। অনেকে সাংবদিকতার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেছেন, করছেন। কেউ কেউ কর্পোরেট সেক্টরের বেশি সুযোগ- সুবিধার চাকরি বাদ দিয়ে সাংবাদিকতা করছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গণের মূলধারার গণমাধ্যমে কেউ লিখছেন, কারও ছবি প্রকাশিত হচ্ছে। ইচ্ছে করলে তাদের অনেকে অন্য কোনো পেশা বেছে নিতে পারতেন।
তারা বেছে নিয়েছেন সাংবাদিকতা। তাই বলে এমন পরিণতি বরণ করতে হবে?
সাংবাদিকদের অনেকগুলো সংগঠন। আছেন অনেক নেতৃবৃন্দ। সংবাদকর্মীদের স্বার্থ দেখাই এসব সংগঠনের কাজ। তা কতটা হচ্ছে? একজন সংবাদকর্মী গ্রেপ্তার বা আহত হওয়ার পর, পাশে দাঁড়াতে পারছে এসব সংগঠন? সম্পাদক পরিষদ ইতিমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন। অন্যান্য সংগঠনও সাংবাদিক নির্যাতনের বিচার চাইছেন। তা কতটা পর্যাপ্ত? অনেক ক্ষেত্রে আক্রমণকারীদের চিনে- জেনেও, বিচার চাওয়া হচ্ছে বায়বীয় ভঙ্গিতে। আক্রমণকারীরা দেখছে, তাদের নাম- পরিচয় উল্লেখ করে বিচার চাওয়ার সাহস- সামর্থ নেই, সাংবাদিকদের সংগঠন বা নেতৃবৃন্দের।
একজন সংবাদ কর্মী আক্রান্ত হওয়ার পর, কোনো কোনো ক্ষেত্রে, দল-মতে বিভক্ত সাংবাদিক নেতাদের মন্তব্যও পাওয়া যায় না।
সন্দেহ নেই, বাংলাদেশের গণমাধ্যম একটি কঠিন সময় অতিক্রম করছে। পাঠক অভিযুক্ত করছে, গণমাধ্যম অনেক সংবাদ তাদের জানাচ্ছে না। ‘বন্ধুত্বপূর্ণ সাংবাদিকতা’র দায়েও পাঠক গণমাধ্যমকে অভিযুক্ত করছেন। নানা বাস্তবতায় সেলফ সেন্সরশিপ ক্রমশ যেন প্রকট হয়ে উঠছে।
শহিদুল আলমের মতো একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রীকে রাতের বেলা তুলে নিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো হয়- তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা দিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়। আদালত প্রাঙ্গণে তিনি যখন বলেন ‘আমাকে আঘাত করা হয়েছে। আমার রক্ত মাখা পাঞ্জাবি ধুয়ে আবার পরানো হয়েছে’- এর মধ্য দিয়ে, কঠিন বাস্তবতার আরও একটা দিক দৃশ্যমান হয়।
অভিজ্ঞ সম্পাদক-সাংবাদিকরা সিদ্ধান্ত নিতে প্রতি মুহূর্তে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছেন। যেন এক পা এগিয়ে দুই পা পেছাচ্ছেন। বিষয়টি স্বীকার বা অস্বীকার করার নয়। এটা বাংলাদেশের সাংবাদিকতা তথা গণমাধ্যমের বাস্তবতা।
- চকরিয়ায় আঞ্চলিক সড়কে যানবাহনে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে পুলিশের জালে
- চকরিয়ায় মসজিদের নামে অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ
- নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিতে চকরিয়ায় কৃষিজমির সর্বোচ্চ ব্যবহার বাড়ানোর তাগিদ
- চকরিয়ায় বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ
- ইসলামের বৃহৎ স্বার্থে চকরিয়া জামায়াতে ইসলামীর সাথে একটেবিলে বসতে চায়
- চকরিয়ায় চিংড়িঘের দখল নিয়ে দু-গ্রুপে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ১, অস্ত্রসহ ৪ সন্ত্রাসী আটক
- চকরিয়ায় পৌরশহরের তিনটি আবাসিক হোটেল ও চারটি রেস্টুরেন্টে অভিযান
- কিশলয় শিক্ষা নিকেতন স্কুলে বিলুপ্ত কমিটির স্বাক্ষর নিয়ে বিল ভাউচার করার অভিযোগ
- শীতের কম্বল দিতে বেড়িয়ে পড়েন চকরিয়ার মানবিক ইউএনও আতিকুর রহমান
- চকরিয়ায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ইউপি মেম্বারসহ আহত ৪
- কক্সবাজার সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আকতার চৌধুরী
- জমজম হাসপাতালে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু ডাক্তারের বক্তব্য
- শীতের কম্বল দিতে বেড়িয়ে পড়েন চকরিয়ার মানবিক ইউএনও আতিকুর রহমান
- চকরিয়ায় পৌরশহরের তিনটি আবাসিক হোটেল ও চারটি রেস্টুরেন্টে অভিযান
- খুটাখালীতে শতাধিক পরিবারে শীতবস্ত্র বিতরণ
- চকরিয়ায় বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ
- চকরিয়ায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণরর মামলার অন্যতম আসামি ফারুককে গ্রেফতার করেছে র্যাব
- পেকুয়ায় রব্বত আলী পাড়া সড়কে গাড়ি চলে না ২০ বছর!
- কিশলয় শিক্ষা নিকেতন স্কুলে বিলুপ্ত কমিটির স্বাক্ষর নিয়ে বিল ভাউচার করার অভিযোগ
- ইসলামের বৃহৎ স্বার্থে চকরিয়া জামায়াতে ইসলামীর সাথে একটেবিলে বসতে চায়
- চকরিয়ায় মৎস্য অধিদপ্তরের উদোগে নৌযান মালিক ও সারেং দের নিয়ে কর্মশালা
- কক্সবাজার সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আকতার চৌধুরী
পাঠকের মতামত: